বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারে ফ্ল্যাগশিপ সেগমেন্টে Samsung দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে। প্রতি বছর তাদের Galaxy S সিরিজ নিয়ে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়। ২০২৬ সালেও তার ব্যতিক্রম হবে না, কারণ আসছে Samsung Galaxy S26 Series। এই সিরিজে তিনটি শক্তিশালী মডেল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে — Samsung Galaxy S26 Ultra, Samsung Galaxy S26+, এবং সর্বাধিক উন্নত মডেল Samsung Galaxy S26 Ultra।
এখনই প্রযুক্তি দুনিয়ায় শুরু হয়েছে এই ফোনগুলিকে ঘিরে তীব্র আলোচনা। সম্প্রতি জনপ্রিয় টিপস্টার @UniverseIce এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে Galaxy S26 Ultra-র ক্যামেরা সংক্রান্ত কিছু মূল তথ্য ফাঁস করেছেন। আর এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, Samsung এবার স্মার্টফোন ফটোগ্রাফির সংজ্ঞাই বদলে দিতে চলেছে।
কোয়াড ক্যামেরা সেটআপে নতুন চমক-Samsung Galaxy S26 Ultra
লিক অনুযায়ী, Samsung Galaxy S26 Ultra ফোনে থাকবে কোয়াড রিয়ার ক্যামেরা সিস্টেম, অর্থাৎ পিছনে থাকবে চারটি শক্তিশালী লেন্স। এই ক্যামেরাগুলি শুধু সংখ্যায় নয়, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও নতুন এক মানদণ্ড তৈরি করতে পারে।
২০০ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি ক্যামেরা-Samsung Galaxy S26 Ultra
এই ফোনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে এর ২০০MP প্রাইমারি সেন্সর। এটি F/1.4 অ্যাপার্চার, 1/1.3 ইঞ্চি সেন্সর সাইজ, এবং 0.6μm পিক্সেল সাইজ সহ আসবে। বড় সেন্সর ও উন্নত অ্যাপার্চারের কারণে কম আলোতেও ছবিতে থাকবে উজ্জ্বলতা ও নিখুঁত রঙের ভারসাম্য।
Samsung তাদের নিজস্ব ISOCELL প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, যা পিক্সেল মের্জিং এর মাধ্যমে আরও বেশি আলো গ্রহণ করতে সক্ষম। ফলে রাতের ফটোগ্রাফি বা ইনডোর শুটিংয়ে এই ক্যামেরা দারুণ পারফর্ম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫০ মেগাপিক্সেলের ৫x টেলিফটো লেন্স-Samsung Galaxy S26 Ultra
দ্বিতীয় ক্যামেরাটি হবে ৫০MP টেলিফটো লেন্স, যা ৫x অপটিক্যাল জুম সাপোর্ট করবে। এতে থাকবে F/2.9 অ্যাপার্চার এবং 1/2.52 ইঞ্চি সেন্সর সাইজ। অর্থাৎ, দূরের অবজেক্ট জুম করলেও ছবির স্পষ্টতা বজায় থাকবে। এই লেন্সের সাহায্যে কোনো দৃশ্যের ক্ষুদ্রতম ডিটেইলও সহজে ধরা সম্ভব হবে।
৫০ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড লেন্স-Samsung Galaxy S26 Ultra
তৃতীয় ক্যামেরাটি হল ৫০MP আল্ট্রা ওয়াইড লেন্স, যার F/1.9 অ্যাপার্চার এবং 1/2.52 ইঞ্চি সেন্সর সাইজ থাকবে। এই লেন্স ল্যান্ডস্কেপ ও আর্কিটেকচারাল ফটোগ্রাফির জন্য দারুণ উপযোগী। এক ফ্রেমে আরও বড় দৃশ্য ধারণ করা যাবে বিকৃতি ছাড়াই।
১০ মেগাপিক্সেলের ৩x টেলিফটো সেন্সর-Samsung Galaxy S26 Ultra
চতুর্থ ক্যামেরাটি হবে ১০MP টেলিফটো লেন্স, যা ৩x অপটিক্যাল জুম সাপোর্ট করবে। এর অ্যাপার্চার হবে F/2.4 এবং সেন্সর সাইজ 1/3.94 ইঞ্চি। এটি মূলত পোর্ট্রেট শটের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হবে। সাবজেক্টকে স্পষ্ট রেখে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার বা ‘বোকেহ’ ইফেক্ট তৈরি করবে প্রাকৃতিকভাবে।
এই চারটি লেন্স একত্রে Galaxy S26 Ultra-কে একটি “মোবাইল ফটোগ্রাফি স্টুডিও”-তে পরিণত করতে পারে।
সেলফি ক্যামেরা: আরও প্রাকৃতিক, আরও স্মার্ট-Samsung Galaxy S26 Ultra
ফোনের সামনের দিকে থাকবে ১২MP Sony IMX874 সেন্সর। এটি এমনভাবে অপটিমাইজড করা হয়েছে যাতে ছবিতে পাওয়া যায় রিয়েল স্কিন টোন ও নিখুঁত কালার রিপ্রোডাকশন। ভিডিও কল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট তৈরির জন্য এটি দুর্দান্ত হতে চলেছে।
Samsung সম্ভবত এখানে AI ফেস এনহ্যান্সমেন্ট, HDR ফ্রেম ব্যালান্সিং, এবং ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন ফিচার যুক্ত করবে। ফলে চলন্ত অবস্থাতেও ভিডিও রেকর্ডিং হবে আরও স্থির ও পেশাদার মানের।
প্রসেসর ও পারফরম্যান্সে নতুন বিপ্লব
Samsung সবসময়ই তাদের ফ্ল্যাগশিপ সিরিজে শক্তিশালী প্রসেসর যুক্ত করে। লিক অনুসারে, এবারও কোম্পানি দুই ধরনের চিপসেট ভ্যারিয়েন্ট আনবে।
- Exynos 2600 SoC — ইউরোপ ও কোরিয়া সহ কিছু নির্বাচিত মার্কেটে এই প্রসেসরসহ ফোন বিক্রি হতে পারে।
- Snapdragon 8 Elite Gen 5 — যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও আরও কিছু বড় বাজারে এই ভ্যারিয়েন্ট লঞ্চ হতে পারে।
দুটি চিপই ৩nm আর্কিটেকচারে নির্মিত, যা আগের প্রজন্মের তুলনায় ৩০% বেশি কার্যক্ষমতা ও ২০% কম বিদ্যুৎ খরচ নিশ্চিত করবে। গেমিং, মাল্টিটাস্কিং বা ভিডিও এডিটিং – যেকোনো কাজেই ফোনটি হবে দারুণ ফ্লুইড।
এছাড়াও, Galaxy S26 Ultra-তে থাকতে পারে AI ভিত্তিক পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যা ব্যবহারকারীর অভ্যাস অনুযায়ী ব্যাটারি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবে।
উন্নত AI ফিচার ও সফটওয়্যার
Samsung এবার তাদের Galaxy S সিরিজে Galaxy AI 2.0 প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করতে পারে। এর মাধ্যমে থাকবে একাধিক নতুন ফিচার —
- রিয়েল টাইম ভাষা অনুবাদ,
- ভয়েস ট্রান্সক্রিপশন,
- AI ফটো এডিটিং ও অবজেক্ট রিমুভাল,
- স্মার্ট সামারাইজেশন,
- আর্টিফিশিয়াল লাইট কন্ট্রোল।
ফোনটি চলবে Android 15 ভিত্তিক One UI 7 ইন্টারফেসে, যা আরও স্মার্ট ও মসৃণ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেবে।
ডিজাইন ও ডিসপ্লে: নতুন আকারে পুরোনো অভিজাততা-Samsung Galaxy S26 Ultra
Galaxy S26 Ultra-র ডিজাইনেও থাকবে বড় পরিবর্তন। এবার সম্ভবত ফোনটির ফ্রেমে ব্যবহার করা হবে টাইটানিয়াম অ্যালয় মেটেরিয়াল, যা আগের স্টেইনলেস স্টিলের তুলনায় হালকা ও বেশি টেকসই। কর্নারগুলো হবে আরও গোলাকার, এবং হাতে ধরার অনুভূতি আগের চেয়ে আরামদায়ক হবে।
ডিসপ্লের ক্ষেত্রে থাকবে 6.8 ইঞ্চি QHD+ Dynamic AMOLED LTPO প্যানেল, যা ১Hz থেকে ১২০Hz পর্যন্ত অ্যাডাপটিভ রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করবে। এর সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা হবে ২৮০০ nits, অর্থাৎ তীব্র রোদেও স্ক্রিন স্পষ্ট দেখা যাবে।
HDR10+, Dolby Vision ও Vision Booster ফিচার যুক্ত থাকায় সিনেমা বা গেম খেলার সময় ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্স হবে একেবারে থিয়েটার মানের।
ব্যাটারি ও চার্জিং ক্ষমতা-Samsung Galaxy S26 Ultra
Galaxy S26 Ultra ফোনে থাকতে পারে 5000mAh ব্যাটারি, যা 45W ফাস্ট চার্জিং, 15W ওয়্যারলেস চার্জিং, এবং 10W রিভার্স চার্জিং সাপোর্ট করবে। যদিও লিক অনুযায়ী, Samsung এবারও বক্সে চার্জার অন্তর্ভুক্ত নাও করতে পারে।
Samsung দাবি করছে, নতুন প্রজন্মের ব্যাটারি সেল আরও দ্রুত চার্জ নেবে ও কম গরম হবে। তাছাড়া AI পাওয়ার অপ্টিমাইজেশন প্রযুক্তি ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে সাহায্য করবে।
পারফরম্যান্স, গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া-Samsung Galaxy S26 Ultra
নতুন Snapdragon 8 Elite Gen 5 প্রসেসরের GPU পারফরম্যান্স আগের চেয়ে ২৫% বেশি। ফলে 4K গ্রাফিক্স সহ গেম খেললেও কোনো ফ্রেম ড্রপ বা ল্যাগ দেখা যাবে না।
সাউন্ড সিস্টেমেও বড় পরিবর্তন আনছে Samsung। লিক অনুযায়ী, ফোনটিতে থাকতে পারে Bose টিউন করা স্টেরিও স্পিকার, যা সিনেমাটিক অডিও এক্সপেরিয়েন্স দেবে।
ভিডিও রেকর্ডিং-এর ক্ষেত্রে ফোনটি 8K@30fps এবং 4K@120fps রেকর্ডিং সাপোর্ট করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া, AI স্ট্যাবিলাইজেশন প্রযুক্তির ফলে ভিডিও ফুটেজ হবে আরও স্থির ও প্রফেশনাল মানের।
লঞ্চ ডেট ও সম্ভাব্য দাম-Samsung Galaxy S26 Ultra
আগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল Galaxy S26 সিরিজ লঞ্চ হতে পারে ২০২৬ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু সাম্প্রতিক সূত্রে জানা গেছে, এখন Samsung মার্চ মাসে একটি গ্লোবাল ইভেন্টে ফোনটি উন্মোচন করতে পারে।
Galaxy S26 Ultra ফোনটির সম্ভাব্য দাম হতে পারে প্রিমিয়াম রেঞ্জে, প্রায় ₹1,25,000 থেকে ₹1,40,000 এর মধ্যে (ভারতীয় বাজারে)।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তুলনা
লঞ্চের পর Galaxy S26 Ultra সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে Apple iPhone 17 Pro Max এবং Google Pixel 10 Pro-এর সঙ্গে। এই তিনটি ফোনই ফটোগ্রাফি, AI ফিচার এবং প্রসেসরের দিক থেকে একে অপরের সঙ্গে টক্কর দেবে।
Samsung এর প্রধান লক্ষ্য হবে এমন একটি ফোন তৈরি করা, যা একসঙ্গে প্রিমিয়াম ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও প্রফেশনাল ক্যামেরা অভিজ্ঞতা দেবে।
কেন আপনি অপেক্ষা করবেন Galaxy S26 Ultra-এর জন্য
যদি আপনি এমন একজন ব্যবহারকারী হন যিনি চান —
- DSLR মানের ফটো ও ভিডিও,
- অতি শক্তিশালী পারফরম্যান্স,
- প্রিমিয়াম টাইটানিয়াম বডি ডিজাইন,
- আর সুপার ব্রাইট ডিসপ্লে,
তাহলে Galaxy S26 Ultra আপনার জন্যই তৈরি।
Samsung বরাবরই তার ফ্ল্যাগশিপ সিরিজে “innovation meets perfection” দর্শন অনুসরণ করে। S26 Ultra সেই ধারাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
শেষ কথা
Samsung Galaxy S26 Ultra শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোন নয়, এটি হতে চলেছে এক প্রযুক্তিগত বিপ্লবের প্রতীক।
ক্যামেরা, প্রসেসর, ডিজাইন— প্রতিটি ক্ষেত্রে Samsung নতুন উচ্চতা ছুঁতে চলেছে। এখন শুধু অপেক্ষা অফিসিয়াল লঞ্চ ইভেন্টের, যেখানে দেখা যাবে এই সব লিক কতটা সত্যি প্রমাণিত হয়।
প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য ২০২৬ সাল নিঃসন্দেহে এক বিশেষ বছর হতে চলেছে, কারণ Samsung তাদের নতুন Ultra ফোনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করতে চলেছে কেন তারা এখনও “The King of Flagships”।
Read More :- OPPO Find X9 : প্রিমিয়াম স্মার্টফোনে নতুন ধারা