লঞ্চের আগেই ফাঁস হল iQOO 15-এর দাম ও ফিচার: ভারতের ফ্ল্যাগশিপ বাজারে ঝড় তুলতে আসছে নতুন স্মার্টফোন

২০২৫ সালের শেষ দিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। কারণ, Vivo-র সাব-ব্র্যান্ড iQOO তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ নিয়ে হাজির হতে চলেছে, যার নাম iQOO 15। ইতিমধ্যেই লিকের মাধ্যমে এই ফোনের দাম ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও অফিসিয়ালি এখনো কিছু ঘোষণা করা হয়নি, কিন্তু যতটা তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে — এই ফোনটি একেবারে “ফ্ল্যাগশিপ কিলার” হতে চলেছে।

iQOO ব্র্যান্ডের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

iQOO (উচ্চারণ “আই-কিউ”) হলো Vivo-র পারফর্ম্যান্স-কেন্দ্রিক সাব-ব্র্যান্ড, যেটি বিশেষত গেমার এবং হেভি ইউজারদের জন্য শক্তিশালী পারফর্মেন্স ও উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্টফোন তৈরি করে। ব্র্যান্ডটির মূল লক্ষ্য হলো — এমন ফোন বানানো যা দামে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী, কিন্তু পারফর্ম্যান্স ও ডিজাইন উভয় ক্ষেত্রেই প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা দেয়।

আগেও iQOO 11 ও iQOO 12 সিরিজ ভারতীয় বাজারে ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, আর এবার সেই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আসছে iQOO 15 সিরিজ।

লঞ্চ তারিখ ও উপলক্ষ

লিক হওয়া তথ্য অনুযায়ী, iQOO 15 ভারতের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ হবে ২৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে। কোম্পানি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় “#TheNextMonsterIsComing” ট্যাগ দিয়ে টিজার শেয়ার করেছে।
অনেক টেক এক্সপার্টের মতে, এই লঞ্চ ইভেন্টে শুধু iQOO 15 নয়, বরং iQOO 15 Pro মডেলও একসাথে উন্মোচিত হতে পারে।

লিক হওয়া দাম — বাজেটে ফ্ল্যাগশিপ ফোন!

সবচেয়ে বেশি চর্চার বিষয় হলো এর দাম। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারতের বাজারে iQOO 15-এর প্রারম্ভিক দাম হতে পারে প্রায় ₹৫৯,৯৯৯ থেকে ₹৬৪,৯৯৯ এর মধ্যে।
অফারসহ দাম কিছুটা কম হতে পারে — যেমন ব্যাংক ডিসকাউন্ট, এক্সচেঞ্জ বোনাস বা প্রি-অর্ডার কুপন ইত্যাদি।

iQOO-এর কৌশল একদম পরিষ্কার — তারা চায় এমন একটি ফোন বাজারে আনতে, যা পারফর্মেন্সে Samsung Galaxy S26 বা OnePlus 15-এর সমান, কিন্তু দামে অনেকটা কম। অর্থাৎ “পাওয়ারফুল ফ্ল্যাগশিপ ইন আ বাজেট প্রাইস রেঞ্জ।”

iQOO 15-এর সম্ভাব্য স্পেসিফিকেশন (লিক অনুযায়ী)

যদিও এখনো অফিসিয়াল ফিচার প্রকাশ হয়নি, কিন্তু বিভিন্ন সার্টিফিকেশন সাইট ও লিক থেকে যা জানা গেছে, তা নিম্নরূপঃ

 প্রসেসর ও পারফর্মেন্স

  • ফোনটিতে থাকতে পারে Snapdragon 8 Gen 5 চিপসেট — Qualcomm-এর সর্বশেষ ও সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসর।
  • এতে ব্যবহৃত হতে পারে AI পারফর্ম্যান্স টিউনিং সিস্টেম, যা গেমিং এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
  • RAM হিসেবে থাকবে ১২GB থেকে ১৬GB LPDDR5X, আর স্টোরেজ হবে ২৫৬GB / ৫১২GB UFS 4.0

অর্থাৎ, iQOO 15 এমন একটি ফোন হতে পারে যেটি একাধিক হেভি অ্যাপ একসাথে চালালেও কোনো ল্যাগ করবে না।

ডিসপ্লে ও ডিজাইন

iQOO সবসময়ই তাদের ফোনে ডিসপ্লে কোয়ালিটি নিয়ে মনোযোগী থাকে।
লিক অনুযায়ী, iQOO 15-এ থাকবে:

  • ৬.৮ ইঞ্চি 2K LTPO AMOLED ডিসপ্লে
  • রিফ্রেশ রেট: ১৪৪Hz
  • টাচ স্যাম্পলিং রেট: ৩০০০Hz পর্যন্ত
  • সর্বাধিক উজ্জ্বলতা: ৬০০০ নিট (যা সূর্যের আলোতেও স্পষ্ট দেখা যায়)

ফোনটির বডি ডিজাইনও প্রিমিয়াম — গ্লাস ব্যাক ও অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমসহ। রঙের মধ্যে “Storm Black”, “Racing Gold” এবং “Cyber Silver” দেখা যেতে পারে।

ক্যামেরা সেটআপ

ক্যামেরা সেকশনেও iQOO এবার বেশ গুরুত্ব দিয়েছে।
লিক থেকে জানা যাচ্ছে:

  • প্রধান সেন্সর: ৫০ মেগাপিক্সেল (Sony IMX890 সেন্সর)
  • আলট্রা-ওয়াইড লেন্স: ৫০ মেগাপিক্সেল
  • পেরিস্কোপ জুম লেন্স: ৫০ মেগাপিক্সেল, ৩x অপটিক্যাল জুম সহ
  • ফ্রন্ট ক্যামেরা: ৩২ মেগাপিক্সেল

ভিডিও রেকর্ডিং সাপোর্ট থাকতে পারে ৮K ৩০fps পর্যন্ত, এবং OIS (Optical Image Stabilization) সাপোর্ট অবশ্যই থাকবে।

অর্থাৎ, ফটোগ্রাফি প্রেমীদের জন্য এটি হতে চলেছে একটি পাওয়ারহাউস ফোন।

ব্যাটারি ও চার্জিং

ব্যাটারি সেগমেন্টেও iQOO এবার চমক দিতে চলেছে।
ফোনটিতে থাকতে পারে:

  • ৭০০০mAh ব্যাটারি, যা দীর্ঘ সময় ব্যবহারের উপযোগী
  • ১০০W ফাস্ট চার্জিং — মাত্র ২৫ মিনিটেই সম্পূর্ণ চার্জ হতে পারে
  • এছাড়াও থাকতে পারে ৪০W ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট

অর্থাৎ, সারাদিনের ভারী ব্যবহারেও চার্জ নিয়ে চিন্তা করার দরকার পড়বে না।

সফটওয়্যার ও অন্যান্য ফিচার

  • অপারেটিং সিস্টেম: Android 16 (OriginOS 6 বা Funtouch OS 15)
  • ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর
  • ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার
  • IP68 ওয়াটার ও ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স
  • Wi-Fi 7, Bluetooth 5.4 ও NFC সাপোর্ট

এই ফিচারগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে iQOO এবার তাদের সফটওয়্যার ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্সেও অনেক মনোযোগ দিয়েছে।

পারফর্মেন্স ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (প্রত্যাশিত বিশ্লেষণ)

যেহেতু iQOO 15-এ Snapdragon 8 Gen 5 ব্যবহার করা হবে, তাই এটি প্রায় সবদিক থেকেই একটি পারফর্মেন্স মনস্টার হতে চলেছে।
গেমারদের জন্য এতে থাকতে পারে বিশেষ গেমিং মোড, যা ফোনের CPU ও GPU শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
হাই রিফ্রেশ রেটের স্ক্রিনের সঙ্গে মিলিয়ে এটি যে গেমিং অভিজ্ঞতা অসাধারণ দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এছাড়া কোম্পানি সম্ভবত একটি কাস্টম “iQOO Cooling Chamber” যুক্ত করতে পারে, যাতে দীর্ঘ সময় গেম খেলার সময় ফোন গরম না হয়।

ক্যামেরা অভিজ্ঞতা – বাস্তবের কাছাকাছি ছবি-iQOO 15

iQOO 15-এর তিনটি ৫০ মেগাপিক্সেল সেন্সর একসঙ্গে কাজ করে উচ্চমানের ছবি তুলতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধান সেন্সর Sony-এর, যা কম আলোতেও উজ্জ্বল ও বিস্তারিত ছবি তুলতে পারে।
পেরিস্কোপ লেন্সের সাহায্যে দূর থেকে জুম করেও ক্লিয়ার ইমেজ পাওয়া সম্ভব হবে — এমনকি চাঁদের ছবিও তুলতে পারবেন অনেক পরিষ্কারভাবে।

সেলফি ক্যামেরা ৩২ মেগাপিক্সেল হলেও, এতে AI বেসড বিউটি মোড ও HDR সাপোর্ট থাকবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ফিচার-iQOO 15

২০২৫ সালে AI স্মার্টফোনের অন্যতম ট্রেন্ড, এবং iQOO 15 এই দিকটিও বাদ রাখছে না।
ফোনটিতে থাকতে পারে “AI Vision Engine” নামক একটি ফিচার, যা ছবি, ভিডিও ও গেমের ভিজ্যুয়াল কোয়ালিটি রিয়েল-টাইমে বাড়িয়ে দেবে।
এছাড়া AI-ভিত্তিক কল নয়েজ ক্যানসেলেশন, স্মার্ট ভয়েস রিকগনিশন এবং কনটেক্সচুয়াল সাজেশনের মতো বৈশিষ্ট্যও যুক্ত হতে পারে।

 প্রি-অর্ডার ও অফার

iQOO ইতিমধ্যেই একটি “Priority Pass” অফার চালু করেছে বলে খবর। মাত্র ₹১,০০০ রিফান্ডেবল ডিপোজিট দিয়ে ব্যবহারকারীরা ফোনটি আগেভাগে বুক করতে পারবেন।
এর সঙ্গে থাকবে:

  • একটি বিনামূল্যে iQOO TWS ইয়ারবাডস,
  • এক বছরের অতিরিক্ত ওয়ারেন্টি,
  • এবং প্রথম সেল-এ প্রায়োরিটি ডেলিভারি।

এই অফারগুলো তরুণ ক্রেতাদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করবে, কারণ iQOO সবসময়ই “Value for Money” নীতি মেনে চলে।

প্রতিযোগিতার বাজারে iQOO 15-এর অবস্থান

iQOO 15 বাজারে মুখোমুখি হবে একাধিক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে — যেমন OnePlus 15, Realme GT 8 Pro, Samsung Galaxy S26 Ultra, Vivo X300 Pro ইত্যাদি।
তবে iQOO-এর লক্ষ্য স্পষ্ট — কম দামে বেশি ফিচার।

যদি দাম ₹৬০,০০০-এর নিচে রাখা যায়, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে সেইসব গ্রাহকদের প্রথম পছন্দ হবে যারা চান ফ্ল্যাগশিপ অভিজ্ঞতা কিন্তু অতিরিক্ত দামে নয়।

কেন iQOO 15 কেনা সার্থক হতে পারে

১. Snapdragon 8 Gen 5 প্রসেসর — টপ-লেভেল পারফর্মেন্স
২. ২K ১৪৪Hz ডিসপ্লে — প্রিমিয়াম ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স
৩. ৭০০০mAh ব্যাটারি + ১০০W ফাস্ট চার্জ
৪. ৫০+৫০+৫০MP ক্যামেরা সেটআপ
৫. উন্নত কুলিং সিস্টেম ও AI ফিচার
৬. দামের দিক থেকে প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক বেশি ভ্যালু

এই বৈশিষ্ট্যগুলো একে “Flagship Killer of 2025” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

কিছু বিষয় মাথায় রাখুন

  • অফিসিয়াল লঞ্চ না হওয়া পর্যন্ত ফিচার ও দাম পরিবর্তিত হতে পারে।
  • প্রাথমিক লটে সীমিত স্টক থাকতে পারে, তাই আগাম বুকিং করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
  • iQOO সার্ভিস সেন্টার নেটওয়ার্ক এখনো ভারতের সব শহরে পূর্ণভাবে বিস্তৃত নয়, সেটিও বিবেচনা করা দরকার।

উপসংহার

সবমিলিয়ে, iQOO 15 এমন একটি স্মার্টফোন হতে চলেছে যা ভারতের ফ্ল্যাগশিপ বাজারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
Snapdragon 8 Gen 5 প্রসেসর, 2K AMOLED ডিসপ্লে, ট্রিপল ৫০MP ক্যামেরা এবং ১০০W ফাস্ট চার্জিং — এই সবকিছু একসাথে এমন দামে পাওয়া সত্যিই বিরল।

যদি কোম্পানি তাদের প্রতিশ্রুত মান ধরে রাখতে পারে, তাহলে iQOO 15 নিঃসন্দেহে বছরের সেরা স্মার্টফোনগুলোর একটি হয়ে উঠবে।

Read More :- iQOO Z9S 5G: মিড-রেঞ্জ ফোনে ফ্ল্যাগশিপ পারফরম্যান্সের অভিজ্ঞতা

Leave a Comment